পান চাষে স্বাবলম্বী কুড়িগ্রামের পান্ডুল ইউনিয়নের শত শত কৃষক। কম খরচে সারাবছর এর চাষ করা যায় বলে এই অঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপক পরিমানে পানের চাষ করে থাকেন। এখানকার কৃষকরা অনেক আগে থেকেই পান চাষের সাথে যুক্ত। একবার পানের বরজ তৈরী করলে সেটা থেকে প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। ফলে এই ইউনিয়নের কৃষকদের সাফল্য দেখে আশেপাশের এলাকাতেও এর চাষ ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের আপুয়ারখাতা, খামার, মহিষমুড়ি, কাগজীপাড়াসহ প্রায় সবগুলো গ্রামেই পানের বরজ তৈরী করা রয়েছে। এখানকার কৃষকরা বংশ পরম্পরায় পান চাষের সাথে জড়িত। শুধু এই ইউনিয়নেরই প্রায় ৩০০ কৃষক তিনশতেরও অধিক বরজে পান চাষ করছেন। চাষিরা আবাদি ও অনাবাদি জমি উঁচু করে বাঁশ ও খড়ের মাচা দিয়ে বরজ তৈরী করে পান চাষ করছেন। পানের বরজ একবার তৈরী করলে প্রায় দুই যুগে আর তৈরী করতে হয় না। তাই প্রথমবারেই বেশি খরচ হয়। তারপর সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে পানপাতা তুলে বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হতে পারেন।
আপুয়ারখাতা খামার গ্রামের পানচাষি নুর ইসলাম বলেন, আমি ৪০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করছি। পানের এই বরজটি আমার বাবা ২৫ বছর আগে তৈরী করেছিলেন। তখন থেকে এখন পর্যন্ত এই বরজ থেকে পানপাতা তুলে বিক্রি করছি। আমার ভাইয়েরও ১৩ শতাংশ জমিতে বরজ রয়েছে। আমার জমিতে বছরে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় দেড় লাখ টাকারও বেশি আয় করতে পারি।
সাতঘড়ি পাড়ার পানচাষি এরশাদুল হক বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষে ঝামেলা কম। বরজ তৈরীতে বাঁশ, খড়, মাটি, খৈল ও গোরব ব্যবহার করতে হয়। কিছুটা রাসায়নিক সারও ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও কখনো রোগবালাই দেখা দিলে কীটনাশকেরও ব্যবহার করা হয়। এখানকার পানগুলো মিষ্টি হয়। রংপুরের আমাদের এখানকার পান বেশ জনপ্রিয়। আমরা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সেখানেও সরবরাহ করে থাকি।
আরো পানচাষিরা জানান, আগে পান বিক্রি করতে বিভিন্ন হাট বাজারে যেতে হতো। তবে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় কাছেই পান্ডুল বাজারে নিয়ে বিক্রি করা যায়। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এখান থেকে পান কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে ৮০টি পান ৮০-১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, কুড়িগ্রাম জেলায় ২৮ হেক্টর জমিতে ৩৯৫টি বরজ রয়েছে। এখান থেকে বছরে প্রায় ২০৫ মেটিক টন পানের উৎপাদন হয়। দিন দিন পানের চাষ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এতে স্থানীয় ও আশপাশের এলাকাতে পান চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দৈনিক বগুড়া