বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নদীর চরে বাদাম চাষে ভাগ্য বদল

নদীর চরে বাদাম চাষে ভাগ্য বদল

নড়াইলের লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলার মধুমতি ও নবগঙ্গা নদীর ভাঙ্গন কবলিত চর অঞ্চলের চাষিদের বাদাম চাষে ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলের চাষিদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদাম চাষ। সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাদামের আবাদ শুরু হয় এবং জুন-জুলাই মাসে জমি থেকে বাদাম উত্তোলন করা হয়।

অল্প খরচে ভাল ফলন ও অধিক লাভ হওয়ায় নদী তীরবর্তী চরবাসী কৃষক বাদাম চাষের দিকে ঝুঁকছে। জনপ্রিয় চিনাবাদাম চাষ নদীগর্ভে বিলিন নিঃশ্ব কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রান্তিক চাষিরা বাদাম চাষে লাভবান হয়ে নতুন করে একটু ভালভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন বুনছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন চর জাগা মাটিতে ধান, পাট, গম, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল হয় না। বাদাম চাষ ভাল হয়। পর পর তিন বছর জমিতে বাদাম চাষ করলে মাটির গুনাগুন ফিরে আসে। এর ফলে সেই জমিতে ধান, পাট, গম, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদের উপযোগী হয়। জেলায় এ বছর ৩৫০ হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৩৯৩ হেক্টরে বাদাম আবাদ হয়েছে। নড়াইলের তিনটি উপজেলার মধ্যে লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় বাদামের আবাদ হয়। জেলায় চলতি বছর ৭৪৪ মেট্রিক টন বাদাম উৎপাদন হয়েছে।

কৃষক মো. বুলু মিয়া জানান, কৃষি জমি সবটুকু নদীতে চলে (ভেঙে) যাওয়ার পরে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম তখন অনেক কষ্টে সংসার চলেছে। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বাদাম চাষ করে ভাল আছি। এ বছর এক একর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম খরচ বাদে এক লাখ ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।

ধানাইড় গ্রামের কৃষক জুয়েল মৃদ্ধা জানান, নতুন চর জাগা জমিতে তিন থেকে চার বছর বাদামের আবাদ ভাল হয়। পরে সেই জমিতে বাদামের আবাদ তেমন ভাল হয় না। তবে তিন চার বছর বাদাম চাষ করা হলে সেই জমিতে পরবর্তী বছর অন্যান্য ফসল ভাল হয়।

আড়িয়ালা গ্রামের কৃষক আলমগীর জানান, বিশ বছরের ও বেশি সময় ধরে প্রতি বছরই তারা বাদামের আবাদ করেন। চলতি বছরে প্রায় তিন একর (১শ শতকে এক একর) জমিতে বাদামের আবাদ করে ৭০-৭২ মণ বাদাম পেয়েছেন। এবছর তিনি ৩ লাখ টাকারও বেশি লাভ হবে বলে আশা করছেন।

ব্যবসায়ী লিটন শেখ বলেন, প্রতি বছর তিনি নড়াইল থেকে বাদাম কিনে সিলেট, রংপুর, চিটাগং ও ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বিক্রি করেন লাভও ভাল হয়।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক দীপক কুরার রায় বলেন, চলতি বছর ৯শ জন বাদাম চাষিদের মাঝে বিনা মূল্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। মধুমতি ও নবগঙ্গা নদী চর এলাকায় বাদাম চাষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় কৃষকের পাশে থাকে। এ চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাদাম চাষ বাড়ছে। চর অঞ্চলের জনপদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাদাম চাষ ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ভাঙ্গনে নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলো বাদাম চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ: