সংগৃহীত
বর্তমানে আমাদের দেশের রফতানি আয়ের অন্যতম উৎস তৈরি পোশাক খাত। আর এই খাতের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে তুলা।
দেশে প্রতিনিয়ত তুলার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার পরও দেশে বাড়ছে না তুলা চাষ কার্যক্রম। অথচ ব্যাপকভাবে তুলা চাষের ফলে দেশের তৈরি পোষাক খাত তথা অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।
তুলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের ঐতিহ্য, ইতিহাস, সভ্যতা ও অর্থনীতি। এটি আমাদের দ্বিতীয় মৌলিক চাহিদা, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের তুলার তৈরি বস্ত্রের প্রয়োজন হয়। বস্ত্র ছাড়া আমরা একদিনও চলতে পারবো না।
খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গায় ২০২৩-২৪ মৌসুমে ২৫০ জন কৃষক ১৫০ টি প্লটে সাদা সোনা খ্যাত হোয়াইট গোল্ড -১/২ সিবি হাইব্রিড-১ জাত এবং পরীক্ষামূলকভাবে বিটি জাতের তুলা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষক।
আগের তুলনায় তুলার উৎপাদন ও দাম উভয় বেড়েছে। তুলা চাষ করলে কৃষি জমির উর্বরতা বাড়ে। তুলা চাষ করতে আগ্রহী কৃষকদের স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। তাদেরকে তুলা চাষ পদ্ধতি শেখানো হয় এবং মাঠ পর্যায়ে তাদের খোঁজখবর নেয়া হয়।
চাষিদের উৎপাদিত বীজতুলার সুষ্ঠুভাবে বজারজাতকরণ বীজতুলার গুণগতমান ও তুলা চাষি কতৃর্ক তুলার ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে নিয়মিতভাবে তদারকি ও সমন্বয় করা হয়। ফলে তুলা চাষিদের তুলা বিক্রয় করতে বেগ পোহাতে হয় না।
হেক্টর প্রতি উফশী ৩টন এবং হাইব্রিড সাড়ে ৩টন তুলা উৎপাদনের আশা করছেন তুলা বিভাগ। গত বছর তুলার প্রতি কেজি ৯৫ টাকা একই সঙ্গে প্রতিমণ তুলা ৩৮০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। যদিও এ বছর এখনো দাম নির্ধারণ করা হয়নি।
এদিকে দেশে তুলার চাষ বাড়লে আমদানি নির্ভরতা কমবে, এতে করে দেশ ও কৃষক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। তুলার আঁশ দিয়ে তৈরি সুতা আর তুলা বীজ থেকে তৈরি তেল দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে।
সরেজমিন দেখা যায়, সবুজে মোড়ানো ক্ষেতে ধবধবে সাদা তুলা বসন্তের শীতল বাতাসে দোল খাচ্ছে। দেখে যেন মনে হয় চন্দ্রিমা রাতে সবুজের মাঠে আলো জ্বলছে। তুলা ক্ষেত খাগড়াছড়ি চট্টগ্রাম সড়কের পাশে হওয়ায় সবার দৃষ্টি কাড়ে।
মাটিরাঙ্গা তুলা উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২০২১-২২ মৌসুমে উফশী জাতের তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০.১৮ হেক্টর, আর হাইব্রিড ৪.৮২ হেক্টর।
ওই বছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা উফশী ২৩৯.১০ মেট্রিক টন, হাইব্রিড ১৫.৯ মেট্রিক টন। একই বছরে উফশী তুলা চাষে ৭৬.১৭ হেক্টর জমি ও হাইব্রিড ৪.৫ হেক্টর জমি চাষে অগ্রগতি হয়। উৎপাদন হয় উফশী ২২৮.৫১ মেট্রিক টন, হাইব্রিড ১৪.৮৫ মেট্রিক টন। ওই বছর ১৮০ জন কৃষক তুলা চাষ করেন।
২০২২-২৩ মৌসুমে উফশী জাতের তুলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০.১৮ হেক্টর, আর হাইব্রিড ৪.৮২ হেক্টর। ওই বছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা উফশী ২৪৮.৫৫ মেট্রিক টন, হাইব্রিড ১৬.১৪ মেট্রিক টন।
একই বছরে উফশী তুলা চাষে অগ্রগতি ৭৫.৩৬ হেক্টর জমি, হাইব্রিড ৪.৫ হেক্টর জমি। অগ্রগতি উৎপাদন হয় উফশী ২২৬.০৮ মেট্রিক টন, হাইব্রিড ১৪.৭৮ মেট্রিকটন। ওই বছরে কৃষকের সংখ্যা বেড়ে ২৩০ জন কৃষক তুলা চাষ করেন।
২০২৩-২৪ মৌসুমে উফশী জাতের তুলা চাষ কমে হাইব্রিড বা উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ে কৃষকদের। ওই বছর উফশী জাতের তুলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হেক্টর, আর হাইব্রিডে ২৫ হেক্টর। ওই বছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা উফসী ১৫০ মেট্রিক টন, হাইব্রিড ৮২.৫মেট্রিক টন।
একই বছরে উফশী তুলা চাষে অগ্রগতি ৪৭.৫ হেক্টর জমি, হাইব্রিড ২০হেক্টর জমি। বর্তমানে বীজতুলা উত্তোলন চলমান রয়েছে। এ বছরে কৃষকের সংখ্যা বেড়ে ২৫০ জন।
মাটিরাঙ্গা তুলা উন্নয়ন বোর্ড বিনামূল্যে বীজ সার এবং কীটনাশক প্রদান করে। একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে তুলা চাষ বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প কর্তৃক সেচের জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়।
তুলা চাষি বিপ্লব ত্রিপুরা বলেন, মাটিরাঙ্গা তুলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে বীজ সার সহ সব ধরনের পরামর্শ পেয়ে তুলা চাষে আগ্রহী হই। এবার বেশি জমিতে তুলা চাষ করেছি। এবারো বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।
তুলা চাষি বিজয় কৃষ্ণ বলেন, এবারই এক বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। আশা করছি, এই জমিতে ৬০-৭০ হাজার টাকার তুলা বিক্রি করতে পারবো। এছাড়াও সাথি ফসল হিসেবে এ জমিতে বরবটি, লাল শাক ফলাতে পারবো।
মাটিরাঙ্গা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কটন ইউনিট অফিসার মো. সুমন বলেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় ৫ বছর ধরে মাটিরাঙ্গায় তুলা চাষ শুরু হয়েছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বিনামূল্যে বীজ সার ও কীটনাশক দেয়ায় কৃষক তুলা চাষে উদ্ধুদ্ধ হয়। ফলে দিন দিন তুলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বিঘা প্রতি ১০-১৪ মণ ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ