বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ডয়চে ভেলেকে প্রধান উপদেষ্টা

ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার বিকল্প নেই

ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার বিকল্প নেই

সংগৃহীত

ভালো সম্পর্ক ছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের গত্যন্তর নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জার্মানির সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে সম্প্রতি দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারের সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম মাসে নেওয়া উদ্যোগ ও আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে ওই মন্তব্য করেন ড. ইউনূস।

ভারত সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী এবং আমাদের একমাত্র প্রতিবেশী বলা যায়। কারণ, চারদিক থেকেই ভারত আমাদের আছে। কাজেই তার সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক হওয়া উচিত এবং হবে। এ ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নেই, তাদেরও গত্যন্তর নেই। দুই দেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক রেখে কেউ লাভবান হবে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা হবে ভারতের সঙ্গে সবচেয়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। বন্ধুত্বের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া—এটাই আমাদের উদ্যোগ। পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন আছে। দুই দেশের মধ্যকার চলমান বিরোধ নিরসনে দুই দেশ আন্তর্জাতিক আইন মেনে নিলেই সেটার সমাধান হবে। সার্ক একটা পরিবারের মতো ছিল। আমরা সেই কাঠামোতে ফিরে যেতে পারি কি না, দেখব। শুধু ভারতের সঙ্গে না, দক্ষিণ এশিয়ায় যত দেশ আছে, সবাই যেন পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। শান্তিপূর্ণ জোন হিসেবে আমরা একে গড়তে চাই। বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে সার্ক ও বিমসটেককে সক্রিয় করার চেষ্টা করব।

সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, শান্তি-শৃঙ্খলা হলো সবার প্রথমে। যেহেতু বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা আসছি, কাজেই প্রথম দায়িত্ব হলো শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ব। মানুষের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা। আমাদের দায়িত্ব অনেক। অর্থনীতি একটা বিশৃঙ্খল, ভঙ্গুর অর্থনীতি হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে মানুষ এত বিক্ষুব্ধ। সবকিছু লুটপাট। এটা লুটের একটা সরকার ছিল। কাজেই সেই লুটের সরকার থেকে সত্যিকার সরকার, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা—এটাও মানুষের একটা আকাঙ্ক্ষা এবং এটা দ্রুত দেখতে চায়। সেগুলো আমাদের করার চেষ্টা। এক মাসের মধ্যে আমাদের যতটুকু সম্ভব করেছি।

সংবিধান বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংবিধানে হাত দিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে—সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে, না কি এই সংবিধানেই কিছু সংশোধন করা হবে? এ বিষয়ে মতভেদ আছে। এজন্য কমিশন হবে, বিচার বিবেচনা করবে, একমত হবে। এর ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত তো আমরা নির্বাচনের রূপরেখা ঠিক করতে পারছি না। কী ধরনের নির্বাচন হবে, কী কী নির্বাচন হবে—সবকিছুই সংবিধানের ভেতরে থাকবে। পুরো আন্দোলনের ব্র্যান্ড নেইম হচ্ছে সংস্কার। সংস্কার হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা। আমরা সেই আকাঙ্ক্ষার অংশীদার। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি যেন আমরা সেই আকাঙ্ক্ষা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পূরণ করতে পারি।

অর্থনীতি নিয়ে তিনি বলেন, বিগত সরকার ব্যাংকিং সিস্টেম পুরোটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলতে কোনো জিনিস ছিল না। এগুলো সবকিছু নতুন করে গড়ে তুলতে হচ্ছে। দেশকে বাঁচাতে হলে, সামনে নিয়ে যেতে হলে করতে হবে। আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ভিত্তিটা করতে হবে। কিছুটা শৃঙ্খলা এসেছে। সবটা পেরে গেছি, তা না। বৈদেশিক মুদ্রার অভাব আছে। বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিশাল বিশাল অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো শোধ করার পালা এসেছে আমাদের ওপরে। তারা নিয়ে গেছেন, ভোগ-দখল করেছেন। এখন টাকাটা জনগণকে শোধ করতে হবে। সেই পরিশোধের টাকা কোথা থেকে আসবে, কীভাবে আসবে—এই চিন্তা আমাদের বড় চিন্তা। আমরা পৃথিবীর সামনে এমন একটা রাষ্ট্র হতে চাই না, যে তার অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারে না। আমরা অঙ্গীকার রক্ষা করতে চাই। অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির ওপরে দাঁড় করাতে চাই, যেন ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি না হয়।

সুশাসনের বিষয়ে ইউনূস বলেন, চেষ্টা করছি আমরা, কিন্তু পুরোপুরি হয়নি। প্রশাসনে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। বহু পরিবর্তন হয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে। সব ভিসিই চলে গেছেন। ভিসি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে প্রো-ভিসি দিতে হচ্ছে এবং এই নিয়োগে সবাই খুশি। আবার নতুন করে বিচার ব্যবস্থা চালু হবে। অনেক পরিবর্তন আমাদের একসঙ্গে করতে হচ্ছে। অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে।

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পদক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, এখনো সন্তুষ্ট হওয়ার সময় আসেনি। আমাদের প্রথম দৃষ্টি হচ্ছে তালিকা করা। এরপর সব শহীদ পরিবারের দায়িত্ব নেবে সরকার।

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে তিনি বলেন, সব দেশে সংখ্যালঘু নিয়ে সমস্যা হয়। সংবিধানের অধিকার সবার প্রাপ্য। আমরা তো হিন্দুর প্রাপ্য, মুসলমানের প্রাপ্য কী, বৌদ্ধর প্রাপ্য—এ রকম করে ভাগ করে দিইনি। সরকারের দায়িত্ব হলো এই অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করা।

নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন করতে হবে, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হিসেবে যেন গৃহীত হয়। তাহলে মনে করব যে, আমাদের এই সময়টা সার্থক হয়েছে। সেটার জন্য পরিবেশ লাগে, আইন লাগে। সংবিধান হলে নির্বাচনী আইন, নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। এই সরকারের বড় জিনিস হলো সংস্কার। এই সংস্কারটা সম্পন্ন করতে হবে। আমাদের সবকিছু কলাপ্স (ভেঙে পড়া) করে গেল—এমন যেন না হয়। হঠাৎ করেই সবকিছু জিরোতে গিয়ে পৌঁছবে না। পুরোনো বাংলাদেশ ইতি। এটা নতুন বাংলাদেশ, আমরা নতুন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে জেগে উঠব।

সূত্র: কালবেলা

সর্বশেষ: