সংগৃহীত
প্রকৃতিতে আগুনঝরা পলাশ ফুলের মেলা জানান দেয় বসন্ত সমাগত। যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিক আর শিল্পীদের কথা-গানে-ছবিতে পলাশ ফুল এসেছে বারবার। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় পলাশ এসেছে এভাবে—‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল/এনে দে এনে দে নইলে/বাঁধব না, বাঁধব না চুল...।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে-কবিতায় অসংখ্যবার এসেছে পলাশের কথা। পলাশ ফুলের আরেক নাম ‘অরণ্যের অগ্নিশিখা’। ফুল ফোটার সময় পলাশ গাছের উঁচু উঁচু পাতা শূন্য ডালে ফুটে থাকে। দূর থেকে দেখে মনে হয় গাছে আগুন লেগেছে।
বসন্তে আগুন রাঙা পলাশের রূপ কার না ভালো লাগে! অনেক দূর থেকেও পলাশ ফুল মানুষের নজর কাড়ে। পলাশ (Parrot tree, Bastard Teak) মাঝারি আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Butea monosperma। এটি Fabaceae পরিবারের সদস্য। এটি তার ফুলের জন্যই বিখ্যাত। পলাশ গাছ সর্বোচ্চ ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। শীতে পাতা ঝরে গেলে এর কলি ফোটে। এরপর বসন্তে এ গাছে ফুল ফোটে। টকটকে লাল ছাড়াও হলুদ ও লালচে কমলা রঙের পলাশ ফুলও দেখা যায়। এটি থোকায় ফুল ফোটে। পলাশ ফুল ২ থেকে ৪ সে: মি: লম্বা হয়। কুঁড়িগুলো দেখতে অনেকটা বাঘের নখের মতো। এর বাকল ধূসর। শাখা-প্রশাখা ও কাণ্ড আঁকাবাঁকা।
পলাশের নতুন পাতা রেশমের মতো সূক্ষ্ম। গাঢ় সবুজ পাতা ত্রিপত্রী, দেখতে অনেকটা মান্দার গাছের পাতার মতো হলেও আকারে বড়। পলাশের ফল দেখতে অনেকটা শিমের মতো। পলাশ গাছ বাংলাদেশ সহ ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়ায় জন্মে। এই গাছের নানা ঔষধি গুণও আছে।
পলাশ গাছের ছাল, পাতা ও বীজ নানা রোগ সারাতে কাজে লাগে। এই গাছ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ঔষধিগুণ
১। নিয়মিত পলাশ গাছের শিকড়ের রস চোখে দিলে চোখের ছানি ও রাতকানা রোগ ভালো হয়।
২। পলাশ গাছের ছাল এবং শুকনো আদা এক সঙ্গে গুঁড়ো করে পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে হজমের সমস্যা ভালো হয়।
৩। পলাশ গাছের ছাল গুঁড়ো করে হালকা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে পেট ফাঁপা, বায়ু বিকার দ্রুত ভালো হয়।
৪। পলাশের ডাল পুড়িয়ে যে ছাই পাওয়া যায়, তার সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খেলে অর্শ জনিত রক্তক্ষরণ দূর হয়।
৫। পলাশ বীজ গুঁড়ো ও মধুর মিশ্রণ শরীরের যে অংশে গাঁটে ব্যথা হয় তাতে দিলে উপকার পাওয়া যায়।
৬। পলাশ বীজ গুঁড়ো করে আখের গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে যেকোনো মূত্র জনিত সমস্যার উপশম হয়।
৭। চর্মরোগ রোগের চিকিৎসাতেও পলাশের ব্যবহার আছে।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ