সংগৃহীত
লিওনেল মেসি। বিশ্বসেরা এই ফুটবলারের আজ (২৪ জুন) জন্মদিন। প্রিয় তারকার জন্মদিনে মাঝরাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা দিচ্ছেন মেসিভক্তরা।
দীর্ঘ ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি ভক্তদের মনে রাখার মতো মেসি দিয়েছেন শতশত মুহূর্ত। কিন্তু ধরা দিচ্ছিল না আন্তর্জাতিক ট্রফি। ফুটবল জাদুকরের হাতে ওঠে প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি কোপা আমেরিকা। এরপর বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি।
মেসির জন্মের পর প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মাতে আর্জেন্টাইন ভক্তরা, আর সেটা তার হাত ধরেই। ৮০০-এর বেশি গোল, তার কেবিনেটে অসংখ্য বড় ট্রফি। এমন একজনের বিশেষ মুহূর্তগুলো বাছাই করা বেশ কঠিন।
কে ভেবেছিল রোজারিওর সেই ছোট্ট ছেলে, যে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নিজ শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল, সে একদিন রাজত্ব করবে বিশ্ব ফুটবলে! বিশ্ববাসীকে চেনাবে নিজ শহরকে।
১৯৮৭ সালের এই দিনে আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন মেসি। বাবা জর্জ মেসি ও মা সেলিয়া কুচেত্তিনির তৃতীয় সন্তান তিনি। ১১ বছর বয়সে শরীরে গ্রোথ হরমোনজনিত জটিলতা দেখা দেয় তার। চিকিৎসার সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। তার চিকিৎসার আশা মেসির পরিবার পাড়ি জমায় বার্সেলোনায়।
২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে তার ট্রায়ালের ব্যবস্থা করে বার্সেলোনা। কিশোর মেসির পায়ের জাদুতে মুগ্ধ বার্সোর ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ। ১৪ ডিসেম্বর, কাগজ না পেয়ে ন্যাপকিনে মেসিকে কাতালান ক্লাবে স্বাক্ষর করান তিনি। সম্প্রতি সেই ন্যাপকিন বিক্রি হয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১ কোটি টাকায়।
যুব বিশ্বকাপ, অলিম্পিকে স্বর্ণ, লিগের সম্ভাব্য সব ট্রফি, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, কোপা আমেরিকা, লা ফিনালিসিমা, বিশ্বকাপ এবং আটটি ব্যালন ডি’অর— এগুলো নিঃসন্দেহে লিওনেল মেসিকে নিয়ে গেছে সর্বকালের সেরা ফুটবলের কাতারে (GAOT)।
চলুন একনজরে দেখে নেয়া যাক মেসির স্মরণীয় মুহূর্তগুলো-
প্রথম গোল
২০০৫ সালের ১ মে। দিনটি মেসির জন্য বিশেষ। ১৭ বছর বয়সে আলবাসেটের বিপক্ষে বার্সেলোনার জার্সিতে পেশাদার ফুটবলের সিনিয়র পর্যায়ে প্রথম গোল করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কাতালান জায়ান্টদের জার্সিতে গোল করেছেন ৬শর বেশি।
জাতীয় দলে অভিষেক
আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক মেসির জন্য সুখকর ছিল না। ২০০৫ সালের আগস্টে হাঙ্গেরির বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেক হয় তার। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন ১৮ বছর বয়সী মেসি।
তবে মাঠে তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৪৩ সেকেন্ড। সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তিনি। এরপর পুরো ক্যারিয়ারে আর মাত্র দুবার লাল কার্ড দেখেছিলেন মেসি।
বার্সেলোনার কিংবদন্তি
২০১২ সালে স্প্যানিশ লিগে গ্রানাডার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে বনে যান বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলদাতা। পেছনে ফেলেন সিজার রদ্রিগেজের ২২৬ গোলের রেকর্ড। এরপর ৭৭৮ ম্যাচে সর্বমোট গোল করেছেন ৬৭২টি। এতে নাম লেখান বার্সার কিংবদন্তির তালিকায়।
রেকর্ড ও পরিসংখ্যান
লিগের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড তার। ২০১২ সালে ৯১ গোল করে এই অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়েন তিনি। ক্লাবের সর্বাধিক গোলদাতা। একই সঙ্গে দেশের জার্সিতেও সর্বোচ্চ গোল তার। সর্বোচ্চ ৮টি ব্যালন ডি’অর জয়ী তিনি।
বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে দুটি বিশ্বকাপে জেতেন সেরা ফুটবলারের খেতাব গোল্ডেন বল। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ, বিশ্বকাপে দেশের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি গোল, ভিন্ন পাঁচ বিশ্বকাপে গোলের সহায়তা (অ্যাসিস্ট), বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচে অধিনায়ক, মাঠে সবচেয়ে বেশি মিনিট খেলা, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড, সবই তার দখলে।
প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা
২০২১ সালে পৃথিবী থমকে গেছে করোনায়। সে সময় সীমিত দর্শকের উপস্থিতে ব্রাজিল আয়োজন করে কোপার ৪৭তম আসর। ঐতিহাসিক মারাকানায় ফাইনালে স্বাগতিকদের হারিয়ে ২৮ বছর পর কোপার শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। আর মেসির ট্রফি কেবিনেট ওঠে প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি।
কাতারে স্বপ্নের ট্রফি উঁচিয়ে ধরা
কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ফ্রান্সকে হারিয়ে অধরা বিশ্বকাপটাও নিজের করে নেন মেসি। মরুর বুকে তারার আলোয় আরাধ্য সেই সোনালি স্মারক উঠে ফুটবলের কালপুরুষ হাতে।
সে সময় জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার পিটার ড্রুরি বলেছিলেন, ‘লিওনেল মেসি হ্যাজ শেকেন হ্যান্ডস উইথ প্যারাডাইস।’ ফুটবলে অমরত্ব অর্জনের পর হয়তো মেসি সেদিন ঠিকই স্বর্গের দুয়ারে হাত রেখেছিলেন।
মেসি যখন ৩৬ পেড়িয়ে ৩৭টি বসন্তে পা রাখলেন তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে কোপা আমেরিকা কাপ। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় সর্বজয়ী ফুটবলের এই মহানায়ক শুধুই উপভোগ করছেন ফুটবলকে। সেটা তো ভক্তদের প্রত্যাশা, তিনি যতদিন মাঠে থাকবেন, ততদিন ভক্তরাও উপভোগ করবেন তার খেলা। জন্মদিনে ফুটবল কিংবদন্তিকে শুভেচ্ছা।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ