সংগৃহীত
লাভের পরিমাণ বেশি থাকায় বগুড়ায় সরিষা চাষের জমি বাড়ছে। বগুড়ায় গত এক বছরে এখন পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। ফলে সরষে ফুলের হলুদ আবরণে ঢাকা পড়েছে বগুড়ার আবাদি জমির মাঠগুলো। শহরতলীর পাকা সড়ক অথবা গ্রামের মেঠোপথে গেলে যে দিকেই তাকানো হোক না কেন চোখ জুড়াবে হলদে রঙে। ক্ষেতের জমিতে এমন ফুলের সমারোহ বছরে একবারই আসে। আর এ সময়টা উৎসবে কেটে যায় প্রজাপতি-মৌমাছিদের।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলার ৩৭ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছিলো। এই পরিমাণ জমি থেকে সরিষা উৎপাদন হয়েছিলো ৬০ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন। এবার সরিষা চাষের জন্য ৫৩ হাজার ৮১০ হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪৫ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে সরিষা লাগিয়েছেন কৃষকরা। জেলার সব কটি উপজেলাতেই সরিষা চাষ হয়। তবে সবচেয়ে চাষ হয় কাহালু উপজেলায়। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য উপজেলার তুলনায় নন্দীগ্রাম, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া ও ধুনটে সরিষা চাষ বেশি।
কাহালু উপজেলার সরিষা চাষী শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি ৪ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ থেকে শুরু করে উঠানো পর্যন্ত খরচ হয় সাড়ে ৬ হাজার টাকা। ফলন পাওয়া যায় ৮-৯ মন। তিনি বলেন, গত বছর সরিষার মৌসুমে প্রতি মণ সরিষা হাটে বিক্রি করেছিলেন ৩ হাজার টাকা থেকে ৩২০০ টাকায়। এবারও ভালো দামের আশা করছেন তিনি।
আব্দুল ওয়াদুদ নামে শেরপুর উপজেলার সরিষা চাষী জানালেন, আড়াই মাসের মাথাতেই ফসল কেটে ঘরে তোলা যায়। এছাড়া খরচও কম তাই। প্রতি বছরই সরিষা চাষ করি। গত দুই বছর আগেও ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলাম। এবার ৫ বিঘা জমিতে সরিষা লাগিয়েছি। সরিষা নিজের বছর চলে যাবে এমন সরিষা রেখে বাকিগুলো সব বিক্রি করবো।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মতলুবর রহমান বলেন, উচ্চ ফলনশীল বারী-১৪ এবং বারী-১৫ এই দুই জাতের সরিষা বগুড়ায় বেশি লাগানো হয়েছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ৮ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সরিষা চাষের জমি বাড়াতে কি ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে আপনাদের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা একেবারে ব্লক পর্যায়ে পরিকল্পনা করেছি।
আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো সেটি নিয়ে আমরা এগিয়েছি। আমরা প্রত্যেকেটা ব্লক পর্যায়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের টার্গেট ফিক্সড করে দিয়েছিলাম। ওই টার্গেট অনুযায়ী আমরা এবার ৪৫ হাজার ৭৩৬ হেক্টর পর্যন্ত অর্জন করতে পেরেছি। এছাড়া বেশি পরিমাণ সরিষা জমিতে চাষ করার জন্য কৃষকদের আমরা বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করেছি। বিগত বছর থেকেই আমরা এই পরিকল্পনা গ্রহণ করি। ভালো সরিষা উৎপাদনকারী কৃষকদের মধ্যে ৬ জন কৃষককে আমরা নগদ অর্থ এবং পুরষ্কার বিতরণ করেছি। আশা করছি আগামী বছর সরিষা চাষের জমি আরো বাড়বে। এতে করে দেশে উৎপাদিত ভোজ্য তেলের পরিমাণও বাড়বে।