সংগৃহীত
বগুড়া সারিয়াকান্দিতে লাল মরিচ প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং মজুরি বাড়ায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ। তুলনামূলক দাম কম পেয়েও কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এদিকে হাইব্রিড মরিচে লাভ বেশি হওয়ায় বেড়েছে হাইব্রিড মরিচের চাষ। এতে কমেছে দেশি মরিচের আবাদ।
বগুড়ার লাল মরিচ দেশের মধ্যে বিখ্যাত। বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি লাল মরিচ উৎপন্ন হয় সারিয়াকান্দিতে। যমুনা এবং বাঙালি নদী বিধৌত এ উপজেলার বেলে দোআঁশ মাটি মরিচ উৎপাদনের জন্য উৎকৃষ্ট। দেশসেরা সেই মরিচ চাষে এই এলাকার কৃষকরা এখন মহা ব্যস্ত। কেউ মরিচ উত্তোলন করছে, কেউ তা পরিবহন করে বাড়ি আনছে, কেউ সেই মরিচ বাছাই করে উঠানে বা চালে বা বড় কোনও চাতালে শুকাতে দিচ্ছে।
এরপর সেই শুকনো মরিচ আবারো বাছাই করে বাজারজাত করতে বস্তায় ভরছেন। গত বছরগুলোতে দেশি মরিচে লাগাতার লোকসানের জন্য কৃষকরা হাইব্রিড জাতের মরিচ বেশি চাষ করেছেন। এ মরিচ আগাম ধরে এবং দেশি মরিচের তুলনায় বেশি উৎপন্ন হয় এবং কাঁচা অবস্থাতেই মরিচ বাজারজাত করে বেশি মুনাফা হয় বলে কৃষকেরা ঝুঁকেছেন হাইব্রিড মরিচে। ফলে এ উপজেলায় কমেছে দেশি মরিচের আবাদ। এদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি এবং শ্রমিকের চড়া মূল্য, উত্তোলনে খরচ বৃদ্ধি, নদীর নাব্যতা না থাকায় পরিবহন খরচ বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে এবার লাল মরিচের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
এদিকে সারিয়াকান্দির বাঙালি সেতুর পশ্চিম পাশে ঘাটপাড়ে মরিচের আড়ৎদাররা জানায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর মরিচের দাম তুলনামূলক একটু কম। গত বছর যেখানে লাল টোপা মরিচ প্রতিমণ ৩ হাজারের বেশি বিক্রি হয়েছে, এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজারের কিছু বেশি।
মরিচ চাষী সদর ইউনিয়নের পারতিত পরল গ্রামের লেবু মিয়া জানান, দেশি জাতের মরিচ চাষ ছেড়ে তিনি এ বছর ৮ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছ ৩ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত তিনি ৪ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। তবে কিছু জমিতে তিনি দেশি জাতের মরিচের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ৪ মণ ১০ কেজি লাল টোপা মরিচ শুকিয়ে একমণ শুকনা মরিচ পাওয়া যায়। এ বছর মরিচ চাষে খরচ বেশি হয়েছে তাই বর্তমান বাজারদরে খুবই সামান্য পরিমাণ লাভ হচ্ছে।
আড়ৎদার রফিকুল ইসলাম জানান, গত শনিবার রাতে লাল টোপা মরিচ ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা এবং শুকনা মরিচ ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩০০ হেক্টর। উৎপন্ন হয়েছে ৩৩১০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ২১৫০ হেক্টর এবং দেশি উফসী জাতের ১১৬০ হেক্টর। উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৩ মেট্রিক টন। গত বছর ৩১৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছিল।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, মরিচের জন্য বিখ্যাত সারিয়াকান্দিতে বরাবরের মত এ বছরও মরিচের আবাদ ভাল হয়েছে। বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। মরিচ চাষের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান এবং সহযোগিতা দেয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে ।