সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)’র সদস্য সোনাতলার মেয়ে মিরা খাতুন খেলতে যাচ্ছে ভারতের নয়া দিল্লি টুর্নামেন্টে নারী ফুটবলার টিমে । আগামী ৫ আগষ্ট দিল্লির একটি মাঠে বিকেএসপির নারী টিমের ১১ প্লেয়ার হিসেবে খেলায় অংশগ্রহণ করবেন।
মিরা খাতুন সোনাতলা পৌর এলাকার আগুনিয়াতাইড় (উত্তর) গ্রামের পান বিক্রেতা ইউনুছে শেখের মেয়ে। চার ভাইবোনের মধ্যে মিরা খাতুন তৃতীয়।
বগুড়ার সোনাতলায় প্রত্যন্ত অঞ্চল আগুনিয়াতাইড় গ্রামে বেড়ে উঠা মিরা খাতুন। ছোট বেলা থেকেই ফুটবল খেলার নেশা। স্কুল থেকে বাড়িতে এসেই সে ফুটবল নিয়ে পাড়ার ছেলে-মেয়েদের সাথে খেলতে যেতো। পাড়া মহল্লা বাসি অনেকে বলতো মেয়ে হয়ে ফুটবল খেলা ভালো দেখায় না। তবুও থেমে থাকেনি মিরা। তখন আগুনিয়াতাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। শুরু হয় উপজেলা পর্যায়ে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট। মিরা খেলায় অংশগ্রহণে নাম দেয় সেখানে। বঙ্গমাতা ফুটবল খেলায় উপজেলা পর্যায়ে মিরার স্কুলকে চাম্পিয়ন করতে সক্ষম হয় এবং তার পারফরমেন্স শ্রেষ্ট গোলদাতা হিসেবে নির্বাচিত হন। তার খেলার পারফরমেন্সে আলাদা করে সবার নজর কাড়ে। খেলতে যায় জেলা বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে। সেখানেও ম্যান অফ দা ম্যাচ সহ শ্রেষ্ট গোলদাতা হয় মিরা। জেলা পর্যায়ে অনেকেই তার বাবাকে বলে তোমার মেয়ে একদিন জাতীয় দলে খেলতে পারবে চেষ্টা চালিয়ে যাও। মিরার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে যায় দারিদ্র্যের দেয়াল।
শত অভাবের মাঝেও নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যায় মিরা খাতুন। এক পর্যায়ে বগুড়া জেলা বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের টিমের হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে বিজয় ছিনিয়ে আসে মিরা।
পৌর এলাকায় রেলগেট কাঁচা বাজারে রাস্তার উপরে ছোট একটি পানের দোকান রয়েছে মিরার বাবার।
বাবা ইউনুস আলী বাজারে পান বিক্রি করতেন আর খেলতে সাহায্য করতেন মেয়ে মিরাকে। এভাবে খেলতে খেলতেই সুযোগ হয় বিকেএসপিতে মিরার।
বাবা ইউনুস আলী শেখ বলেন, বাড়ির জায়গা ছাড়া আর কোন জমি নাই। আর আমার ছেলে-মেয়েরাই আমার স্বপ্ন। শত অভাবের মাঝেও অনেক কষ্ট স্বীকার করে মিরার সাফল্য দেখিয়ে মনে সাহস যুগিয়েছেন। এরপর ঢাকা বিকেএসপিতে ৮ মাস ট্রায়ালের পর সুযোগ মেলে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার। বিকেএসপির ৭০জনের মধ্যে চূড়ান্ত বাছাই শেষে মিরা এখন ২৫ সদস্য টিমের একজন।
আমার সাধ্য নেই বিকেএসপিতে টাকা খরচ করে পড়ানোর তবে মেয়ে প্রতিভা আমাকে সাহস যুগিয়েছে। আমার শখের একটি মোটর সাইকেল বিক্রি করে মেয়ের ভর্তির টাকা জুগিয়েছিল। তবে এখন বুকটা ভরে যায় আমার মেয়ে যখন ভারতে খেলতে যাবে বলে। সব শেষে সোনাতলা বাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন তিনি।