সংগৃহীত
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা মা-বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘তোমার রব আদেশ দিয়েছেন, তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো’। (সূরা: বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩)
মা-বাবার জন্য দোয়া শিখিয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,
رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا
অর্থ: ‘হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন’। (সূরা: বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৪)
মা-বাবার সেবা বিপদমুক্তির অসিলা
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, পূর্ব কালে ৩ জন ব্যক্তি সফরে বের হয়। পথিমধ্যে তারা মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে পতিত হয়। তখন ৩ জনে একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। হঠাৎ গুহা মুখে একটি বড় পাথর ধসে পড়ে। তাতে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। ৩ জনে সাধ্যমত চেষ্টা করেও তা সরাতে ব্যর্থ হয়। তখন তারা পরস্পরে বলতে থাকে যে, এই বিপদ থেকে রক্ষার কেউ নেই আল্লাহ ব্যতীত। অতএব, তোমরা আল্লাহকে খুশী করার উদ্দেশ্যে জীবনে কোনো সৎকর্ম করে থাকলে সেটি সঠিকভাবে বলো এবং তার দোহাই দিয়ে আললাহর নিকট প্রার্থনা কর। আশা করি তিনি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।
আরো পড়ুন >>> কোরআন-হাদিসে মায়ের অধিকার
তখন একজন বলল, আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট কয়েকটি শিশু সন্তান ছিল। যাদেরকে আমি প্রতিপালন করতাম। আমি প্রতিদিন মেষপাল চরিয়ে যখন ফিরে আসতাম, তখন সন্তানদের পূর্বে পিতা-মাতাকে দুধ পান করাতাম। একদিন আমার ফিরতে রাত হয়ে যায়। অতঃপর আমি দুগ্ধ দোহন করি। এরই মধ্যে পিতা-মাতা ঘুমিয়ে যান। তখন আমি তাদের মাথার নিকট দুধের পাত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, যতক্ষণ না তারা জেগে ওঠেন। এ সময় ক্ষুধায় আমার বাচ্চারা আমার পায়ের নিকট কেঁদে গড়াগড়ি যায়। কিন্তু আমি পিতা-মাতার পূর্বে তাদেরকে পান করাতে চাইনি। এভাবে ফজর হয়ে যায়। অতঃপর তারা ঘুম থেকে উঠেন ও দুধ পান করেন। তারপরে আমি বাচ্চাদের পান করাই। اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ ‘হে আল্লাহ! যদি আমি এটা তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের থেকে এই পাথর সরিয়ে নাও’! তখন পাথর কিছুটা সরে গেল এবং তারা আকাশ দেখতে পেল।
দ্বিতীয় জন বলল, হে আল্লাহ! আমার একটা চাচাতো বোন ছিল। যাকে আমি সবচেয়ে ভালোবাসতাম। এক সময় তাকে আমি আহ্বান করলে সে একশ’ দীনার নিয়ে আসতে বলল। আমি বহু কষ্টে একশ’ দীনার জমা করলাম। অতঃপর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। কিন্তু যখন আমি তার প্রতি উদ্যত হলাম, তখন সে বলল, يَا عَبْدَ اللهِ اتَّقِ اللهَ، وَلاَ تَفْتَحِ الْخَاتَمَ ‘হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর। আমার সতীত্ব বিনষ্ট করো না’। তৎক্ষণাৎ আমি সেখান থেকে উঠে এলাম। হে আল্লাহ! যদি আমি এটা তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের থেকে এই পাথর সরিয়ে নাও’! তখন পাথর কিছুটা সরে গেল।
তৃতীয়জন বলল, হে আল্লাহ! আমি জনৈক ব্যক্তিকে এক পাত্র চাউলের বিনিময়ে মজুর নিয়োগ করি। কাজ শেষে আমি তাকে প্রাপ্য দিয়ে দেই। কিন্তু সে কোনো কারণবশত তা ছেড়ে চলে যায়। তখন আমি তার প্রাপ্যের বিনিময়ে গরু ও রাখাল পালন করতে থাকলাম। অতঃপর একদিন লোকটি আমার কাছে আসল এবং বলল, ‘আল্লাহকে ভয় কর, আমার ওপর জুলুম করো না। আমার পাওনাটা দিয়ে দাও। তখন আমি বললাম, এই গরু ও রাখাল সবই তুমি নিয়ে যাও। লোকটি বলল, আল্লাহকে ভয় কর, আমার সঙ্গে ঠাট্টা করো না। আমি বললাম, আমি ঠাট্টা করছি না। ওই গরু ও রাখাল সবই তুমি নিয়ে যাও। অতঃপর লোকটি সব নিয়ে গেল’। হে আল্লাহ! যদি আমি এটা তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের থেকে এই পাথর সরিয়ে নাও! তখন পাথরের বাকীটুকু সরে গেল এবং আল্লাহ তাদেরকে মুক্তি দান করলেন’ (বুখারি হা/৫৯৭৪, ২৯৭২; মুসলিম হা/২৭৪৩; মিশকাত হা/৪৯৩৮ ‘শিষ্টাচার সমূহ’ অধ্যায় ‘সৎকর্ম ও সদ্ব্যবহার’ অনুচ্ছেদ)
উল্লেখ্য, উপোরক্ত অসিলাগুলো হলো বৈধ অসিলা সমূহের অন্যতম। যাতে কোনো রিয়া ও শ্রুতি ছিল না। কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কাম্য ছিল। সেজন্য আল্লাহ উপরোক্ত সৎকর্ম সমূহের অসিলায় তাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ